মো. রেজাউল করিম,ঈদগাঁও,কক্সবাজার ::
সরকার ঘোষিত ভিশন ২০২১ তথা রূপকল্প বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণ লক্ষ্যমাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে কক্সবাজার সদর উপজেলার ৩নং ইসলামাবাদ ইউনিয়নে। বিশাল জনসংখ্যা অধ্যুষিত ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রস্থল তথা শাহ ফকিরা বাজারে স্থাপিত ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার উপশাখার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে উক্ত ওয়ার্ডসমূহের তৃণমূল জনগণ অনলাইনে সরকারি সকল সেবা প্রাপ্তি থেকে দীর্ঘ কয়েক বছর বঞ্চিত রয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, প্রায় তিন বছর আগে স্থানীয় সরকার বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার উপশাখার নীতিগত অনুমোদন দেন সদর উপজেলা প্রশাসন। স্থাপন পরবর্তী ছয় মাস উক্ত সেন্টার থেকে সর্বসাধারণ ডিজিটাল নানান সেবা পেয়ে আসছিলেন। জানা গেছে, কক্সবাজার সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে কেবল ইসলামাবাদ ও খুরুস্কুল ইউনিয়নে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার উপশাখার কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয়া হয়। তবে শুরু থেকে উক্ত দু’উপশাখায় সরকারি ভাবে যাবতীয় সুযোগ সুবিধার সু-ব্যবস্থা করা হয়নি। জনগণের সহজে সেবা প্রাপ্তি ও দুরত্ব জনিত ভোগান্তি লাঘবে মূল ডিজিটাল সেন্টারের পাশাপাশি ও এ উপ-সেন্টার স্থাপনের যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রতিষ্ঠার ছয় মাস যেতে না যেতেই উক্ত উপ শাখার সমস্ত কার্যক্রম অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায়। সেন্টারের উদ্যোক্তা হচ্ছেন একই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিনের ছোট ভাই মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও তার প্রতিবেশি নুরুচ্ছফা। এরা দু’জনই ইউনিয়নের পুর্ব গজালিয়ার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামের সিংহভাগ জনগণ সরকারি ডিজিটালাইজড সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে সরকারী-বেসরকারি ৪২ ধরনের অনলাইন-অফলাইন সেবা দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা ও প্রিন্ট, স্ক্যানিং, ফটোকপি, ই-মেইল আদান প্রদান, ভিডিও কানফারেন্সিং, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, অনলাইন থেকে বিভিন্ন ফরম ডাউনলোড, সরকারি-বেসরকারি ও পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির তথ্য, মোবাইল ও কম্পিউটার সার্ভিসিং, বিদ্যুৎ বিল প্রদান, মোবাইল ব্যাংকিং, টেলিমেডিসিন, অনলাইনে খতিয়ান প্রদান, কৃষি ও পশু সম্পদ সেবা, লাইফ ইন্সুরেন্স সেবা প্রভৃতি। উল্লেখিত সেবাদানের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে এ উপ শাখাটিতে ২টি ল্যাপটপ, ১টি প্রজেক্টর, স্ক্যানার, প্রিন্টার ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক চেয়ার-টেবিল সহ সংশ্লিষ্ট মূল্যবান যন্ত্রপাতি দেয়া হয়। দীর্ঘদিন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উক্ত যন্ত্রপাতি বর্তমানে নষ্ট হওয়ার পথে বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠান ও এর দামী মালামাল রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারক কার্যক্রম না থাকায় দিন দিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে উক্ত সেন্টারটি। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা মো. ইব্রাহিম দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত। এখন তিনি ঈদগাঁও বাজারস্থ কৃষি ব্যংকের নিচে পারিবারিক লফিত ফার্মেসী দেখা শুনায় ব্যস্ত । ডিজিটাল সেন্টারে যাওয়ার এবং সংশ্লিষ্টদের সেবা দেয়ার তার মোটেও সুযোগ হয় না। অপর উদ্যোক্তা নুরুচ্ছফা নিজ এলাকায় পৈত্রিক ভিলিজারীর দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত । অনলাইনে সেবা দেয়া তার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। এ দু’উদ্যোক্তার খাম-খেয়ালীর কারণে শত শত সেবা প্রত্যাশী অনলাইন সেবা থেকে প্রতিনিয়ত বিমুখ হচ্ছেন। কয়েক জন সংবাদকর্মী সরেজমিন ডিজিটাল সেন্টার এলাকায় গিয়ে ভূক্তভোগী বিভিন্ন সেবা প্রত্যাশীর সাথে কথা বলে জানতে পারেন যে, সেন্টারটি বন্ধ থাকায় তাদেরকে ইউনিয়নের পশ্চিম প্রান্তে গিয়ে পরিষদ ভবনের মূল ডিজিটাল সেন্টার থেকে প্রয়োজনীয় সেবা নিতে হচ্ছে। এতে তাদের মূল্যবান কর্মঘন্টা ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। দরিদ্র এলাকার মানুষের পক্ষে অনেক সময় মুল সেন্টারে গিয়ে সেবা নেয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া রয়েছে যানবাহন স্বল্পতা ও ক্ষেত্র বিশেষে যানজট সমস্যা। এ ব্যাপারে ইসলামাবাদ ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা আবুল মনছুর আহমদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, সেন্টার স্থাপনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা শুরু থেকে তার সাথে শেয়ারিং না করায় বর্তমানে এর কার্যক্রম চালু আছে কি নেই তা তার জানা নেই। তিনি খবর নিয়ে বিস্তারিত জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন। উপশাখাটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ব্যাপারে এর মুল উদ্যোক্তা মো. ইব্রাহিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের সাথে সরকারের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তিনি কেবল ব্যবসা করছেন। এখানে সরকারি সেবা দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। কি কি সরকারি সেবা দেয়া হয় এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বিরক্তিবোধ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তিনি সাময়িক বন্ধের পর প্রতিষ্ঠানটিতে আবার ব্যবসা শুরু করেছেন বলে জানান। ইউনিয়ন প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ও উদ্যোক্তা মো. ইব্রাহিমের বড় ভাই জসিম উদ্দিন জানান, সীমিত ভাবে সেন্টারটিতে সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। মেরামত কাজের কারণে নতুন দোকান ঘরে নিজস্ব পুঁজি দিয়ে উদ্যোক্তাকে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। জন্ম নিবন্ধন কোড না পাওয়ায় উক্ত সেন্টারটিতে এ সংক্রান্ত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে চেয়ারম্যান প্রত্যয়নপত্র প্রদান সহ অন্য সরকারি সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে চেয়ারম্যান নুরুল হক সওদাগরের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করলে তার মোবাইল সিমটি সাময়িক বন্ধ বলে মোবাইল সূত্রে জানা যায়। কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলামের সাথে এ প্রতিনিধি কথা বলে জানতে পারেন যে, উক্ত সেন্টারটিতে নূন্যতম সরকারি সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। তবে পরিপূর্ণ সেবা দেয়ার মত যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। তিনি এ সেন্টারটিও অন্যান্য ডিজিটাল সেন্টারের মতই সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন জানিয়ে বলেন, বন্ধ থাকার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পাঠকের মতামত: